আল্লাহর আদেশ মেনে নিন, সুদকে না বলুন

No Comments

Nursitara Khatun

By Nur

বর্তমানকালে সুদ সম্পর্কিত লেনদেন ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি বিরাট অংশ জুড়ে পরিব্যাপ্ত হয়ে গেছে। বড় আকারের প্রায় সকল ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভরশীল হয়ে গেছে সুদী লেনদেনের উপর। এ কারণে সুদের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বর্ণনাগুলো যখন সামনে আসে তখন তা বুঝতে, বুঝাতে এবং মেনে নিতে অনেকের মনে দ্বিধা-সংশয়ের সৃষ্টি হয়। অনেকে এক্ষেত্রে নানা রকম কৌশলের আশ্রয় নিতে চেষ্টা করেন। এটা কোনো মুমিন-মুত্তাকীর জন্য আদর্শ পন্থা নয়। সুতরাং সকলের উচিত আল্লাহ তাআলার আদেশকে মাথায় রেখে পরকালের কথা চিন্তা করে ঠান্ডা মাথায় বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করা, এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং পবিত্র কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা শিরোধার্য করে নিয়ে নিজেদের কর্মজীবনের গতিপথ নির্ণয় করা এবং পরকালের পথ সুগম করা।

আরবী ভাষায় সুদের প্রতিশব্দ রিবা। বাংলা ভাষায় ‘সুদ’ শব্দটি যেমন সুপরিচিত, তেমনি আরবী ভাষায়ও ‘রিবা’ শব্দের ব্যবহার বহুলপ্রচলিত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুওত প্রকাশ এবং কুরআনে কারীম অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে আরবের জাহেলী যুগেও ‘রিবা’ শব্দটি প্রচলিত ছিল। শুধু তাই নয়, সে সময় রিবা অর্থাৎ সুদের লেনদেনও চালু ছিল। সূরা নিসার আয়াত থেকে জানা যায় যে, হযরত মূসা আ.-এর যুগেও ইহুদীদের মধ্যে সুদের লেনদেনের রেওয়াজ ছিল এবং মূসা আ.-এর নিকট আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রেরিত গ্রন্থ তাওরাতেও ‘রিবা’ অর্থাৎ সুদের লেনদেনকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে।

সুতরাং যে শব্দটি প্রাচীনকাল থেকে আরব ও তার আশপাশের এলাকায় পরিচিত ছিল এবং সে অনুযায়ী লেনদেনের রেওয়াজ ছিল, পবিত্র কুরআনে এর প্রতি নিষেধাজ্ঞা বর্ণনা করার পাশাপাশি এ কথাটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মূসা আ.-এর উম্মতের জন্যও রিবা তথা সুদ হারাম করা হয়েছিল; তাই তা এমন কোনো বিষয় নয়, যা কুরআন নাজিল হওয়ার সময় সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে বুঝা বা বুঝানো কঠিন ছিল। তারা সকলেই রিবার হাকীকত বুঝতেন। তাদের কাছে একথা স্পষ্ট ছিল- যে ঋণ ঋণদাতার জন্য কোনো ধরনের মুনাফা বয়ে আনে সেটাই রিবা।

এ কারণে অষ্টম হিজরীতে সূরা বাকারার রিবা সম্পর্কিত আয়াতগুলো যখন নাযিল হয় তখন সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে রিবা’র নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক বিধান বুঝতে এবং মেনে নিতে কোনোরূপ বেগ পেতে হয়নি। মদ্যপানের প্রতি নিষেধাজ্ঞা যেমন তাঁরা নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছিলেন, তেমনি রিবা সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা নাজিল হওয়ার পর তাও তাঁরা অকপটে মেনে নিয়ে সবধরনের সুদী লেনদেন ছেড়ে দিয়েছিলেন।

ইসলাম রিবা’র নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে কেবল নৈতিক বিবেচনার অধীনে রাখেনি; বরং তাকে পুরোপুরি আইনের মর্যাদা দিয়েছে। এ বিষয়ে বিদায় হজ্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐতিহাসিক ভাষণের সংশ্লিষ্ট অংশটুকু বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। নবীজী বলেছেন- সাবধান! জাহেলিয়্যাতের প্রত্যেক বিষয় আমার দু’পায়ের নীচে।… জাহেলীযুগের ‘রিবা’ বাতিল। আর প্রথম রিবা, যা আমরা বাতিল করছি তা আমাদের রিবা; আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের রিবা। তা পুরোটাই বাতিল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২১৮

বর্তমান পৃথিবীতে দু’ধরনের সুদী লেনদেন বেশি প্রচলিত। এক. মহাজনী সুদ, অর্থাৎ কেউ কোনো সাময়িক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কারও নিকট থেকে ঋণ নিলে এর বিপরীতে ঋণের অতিরিক্ত যে অর্থ নেওয়া হয়। দুই. বাণিজ্যিক সুদ, যা কোনো উৎপাদনমূলক কাজে  গৃহীত ঋণের বিপরীতে নেওয়া হয়। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট বর্ণনা- সর্বপ্রকার সুদ হারাম। কেউ কেউ প্রতারণা করে বলে থাকেন যে, পবিত্র কুরআনে যে ‘রিবা’ তথা সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, তার দ্বারা প্রথম প্রকারের সুদ অর্থাৎ মহাজনী সুদ উদ্দেশ্য, যা কোনো সাময়িক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে গৃহীত ঋণের বিপরীতে নেওয়া হয়। তারা এই ধোঁকার ভিত্তি রেখেছে আরেক মিথ্যা দাবির উপর। তারা বলে, কেবল এ ধরনের সুদই নাকি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এবং পূর্ববর্তী জাহেলী যুগে প্রচলিত ছিল। তাই এরূপ সুদকেই কুরআনে কারীমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমান যুগে প্রচলিত বাণিজ্যিক সুদ (commercial interest)-এর রেওয়াজ এবং লেনদেন নাকি সে যুগে ছিল না। সুতরাং তাদের ধারণা মতে এরূপ সুদ কুরআনে কারীমে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়।

আসলে বিষয়টি এমন নয়। প্রথমত এ ধারণা ঠিক নয় যে, রিবা’র যে পদ্ধতি জাহেলী যুগে প্রচলিত ছিল না, তা হারাম নয়। কেননা, ইসলাম যখন কোনো জিনিষকে হালাল বা হারাম  সাব্যস্ত করে তখন তার একটি নির্দিষ্ট পরিচয় থাকে। সেই পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়। নিছক পন্থা-পদ্ধতি পরিবর্তন হওয়ার কারণে বিধান পরিবর্তন হয় না। উদাহরণত কুরআনে কারীমে মদকে হারাম করা হয়েছে। কুরআন নাযিল হওয়ার সময় মদ প্রস্তুত করার যেসব পন্থা-পদ্ধতি ছিল তার সবই হয়ত পরিবর্তিত হয়ে গেছে, কিন্তু মদ তো ঠিকই রয়ে গেছে, তাই মদ হারাম হওয়ার বিধানও বদলায়নি। এমনিভাবে অশ্লীল কর্মকান্ড কুরআন নাযিল হওয়ার সময় একরকম ছিল, বর্তমানকালে তার ধরন অনেক পাল্টে গেছে, তবু অশ্লীলতার নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। সুদ জুয়া’র অবস্থাও তাই। এখন যদি সুদকে আধুনিক ব্যাংকিং অর্থব্যবস্থা বলে এবং জুয়াকে লটারী বলে বৈধ মনে করা হয় তাতে তো শরীয়তের দৃষ্টিতে এগুলোকে বৈধ বলা যাবে না।

একবার নাকি কোনো ভারতীয় নামকরা সঙ্গীতশিল্পী এক আরব বেদুইনের গান শুনে বলেছিল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের গান শোনার কারণেই গানকে হারাম বলেছেন। এরূপ বেসুরো গান হারাম হওয়ারই কথা। আমাদের গান শুনলে কখনও তিনি গানকে হারাম বলতেন না। কুরআনে কারীমে বর্ণিত সুদের নিষেধাজ্ঞাকে জাহেলী যুগের প্রচলিত বিশেষ কোনো সুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করাও ঠিক এমনই।

এছাড়া কমার্শিয়াল ইন্টারেস্ট বা বাণিজ্যিক সুদ জাহেলী যুগে প্রচলিত ছিল না- এমন নয়; বরং তখনও এধরনের বাণিজ্যিক সুদ লেনদেনের রেওয়াজ ছিল। সেযুগে সমাজের বড় বড় ব্যবসায়ীরা সুদভিত্তিক লেনদেনে বর্তমানকালের ব্যাংকের মতো ভূমিকা পালন করত। এছাড়া এক গোত্রের ব্যবসায়ীরা নিজ গোত্রের বা অন্য গোত্রের ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে মোটা অংকের সুদী ঋণ নিয়ে ব্যবসার কাজে খাটাত। কখনও বা সুদী ঋণ নিয়ে ফসল উৎপাদনের কাজে লাগাত। হাদীস ও তাফসীরের বিভিন্ন কিতাবে আছে, আমর ইবনে আওফের গোত্র মুগীরার গোত্রের নিকট থেকে ঋণের বিপরীতে সুদ গ্রহণ করত আর মুগীরার গোত্র তা পরিশোধ করত। এভাবে জাহেলী যুগে তাদের লেনদেন চলত। ইসলামের আগমনের পরও মুগীরার গোত্রের কাছে আমর-এর গোত্রের মোটা অংকের সুদ পাওনা ছিল (যা বাতিল করা হয়েছিল)।

উক্ত বর্ণনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এসব সুদী লেনদেন মূলত ব্যক্তিগত পর্যায়ের কোনো অভাব  বা অর্থসংকটের কারণে ছিল না, যাকে ‘মহাজনী সুদ’ নামে অভিহিত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এগুলো ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সুদী লেনদেন।

এছাড়া তখনকার আরবের লোকেরা কখনও গোত্রের সাধারণ মানুষের অর্থকড়ি এক জায়গায় একত্র করে সেগুলো ব্যবসার কাজে লাগাত। বদর যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে যে কাফেলার বিষয়টি ছিল, সেটিও ছিল একটি ব্যবসায়ী পণ্য আমদানিকারক কাফেলা। সে ব্যবসায় কুরায়শের সকল মানুষের অর্থ লগ্নি করা ছিল।

সহীহ বুখারীতে আছে, হযরত যুবায়র ইবনুল আওয়াম সে যুগের বেশ বড় ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর আমানতদারির সুনামও ছিল সবার কাছে প্রসিদ্ধ। এজন্য অনেকে তাঁর কাছে অর্থ আমানত রাখতে আসত। তিনি সেগুলো আমানত হিসাবে না রেখে ঋণ হিসাবে গ্রহণ করতেন, যাতে মালিকের অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। এরপর তিনি এসব অর্থ নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যের খাতে খাটাতেন। ইনতেকালের সময় তাঁর কাছে মানুষের প্রাপ্য ঋণ ছিল বাইশ লক্ষ দেরহাম। তখনকার সময়ের হিসাবে এ পরিমাণ অর্থকে ছোটখাটো পুঁজি বলা যায় না। এসব ঋণ তাঁর ইনতেকালের পর তাঁর রেখে যাওয়া অর্থ-সম্পদ থেকে পরিশোধ করা হয়েছিল। এগুলো ছিল মূলত তাঁর ব্যবসায়িক ঋণ। সুতরাং এ কথা বলা যে, সে যুগে ব্যবসায়িক ঋণের রেওয়াজ ছিল না- ঠিক নয়।

এ ছাড়া আরও অনেক নজির ইতিহাসে পাওয়া যায়। অতএব কুরআনে কারীমে সুদের প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা সর্বপ্রকার সুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এখন আমরা দেখি, সুদ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কারীমের ভাষ্য-

প্রথম আয়াত : যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এজন্য যে, তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। যার নিকট তার প্রতিপালকের উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, তবে অতীতে যা হয়েছে তা তারই। আর তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় করবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৫

দ্বিতীয় আয়াত : আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৬ অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা সুদ থেকে অর্জিত অর্থ বা তার বরকত নষ্ট করে দেন। আর সদকা দানকারীর অর্থ-সম্পদ বা তার বরকত বৃদ্ধি করে দেন।

তৃতীয় ও চতুর্থ আয়াত : হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। আর যদি তোমরা তাওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। এতে তোমরা (কারও প্রতি) জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না। -সূরা বাকারা  (২) : ২৭৮-২৭৯

পঞ্চম আয়াত : হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩০ এ আয়াতে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, কুরআন নাজিল হওয়ার সময় আরবে চক্রবৃদ্ধি আকারে সুদ খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। তা দূর করার জন্য এ আয়াতে চক্রবৃদ্ধি আকারে সুদ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। তার মানে এ নয় যে, চক্রবৃদ্ধি আকারে না হলে সুদ খাওয়া হালাল হয়ে যাবে। কারণ, অন্যান্য আয়াতে তো যে কোনো রকমের সুদ খাওয়াকে হারাম করা হয়েছে।

ষষ্ঠ ও সপ্তম আয়াত : ভালো ভালো যা ইহুদীদের জন্য বৈধ ছিল আমি তা তাদের জন্য অবৈধ করেছি; তাদের সীমালংঘনের জন্য, আল্লাহর পথে অনেককে বাধা দেওয়ার জন্য এবং তাদের সুদ গ্রহণের জন্য, যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল; এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। তাদের মধ্যে যারা কাফের তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি। -সূরা নিসা (৪) : ১৬০-১৬১

উক্ত দুই আয়াতে ইহুদীদের যেসকল অপরাধের কারণে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তন্মধ্যে একটি ছিল তাদের সুদ গ্রহণের অপরাধ। এটা তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল, তবু তারা সুদ গ্রহণ করত। তাই তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

এরপর সুদের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসসমূহ উল্লেখ করা হচ্ছে :

এক. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাক। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ কী? তিনি বললেন-

১. আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা, ২. জাদু করা, ৩. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা, যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। ৪. সুদ খাওয়া, ৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ৬. জিহাদের ময়দান থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যাওয়া। ৭. সতী-সাধ্বী সরলমনা-উদাসীনা মুমিন নারীদের বিরুদ্ধে অপকর্মের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৬৬, ৬৮৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮৭৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৩৬৭১

দুই. হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি স্বপ্নের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- ‘আমি দেখলাম আজ রাতে আমার কাছে দু’জন মানুষ আসল এবং তারা আমাকে একটি পবিত্র ভূখণ্ডে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে একটি রক্তের নদীর কিনারে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সেই নদীতে একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। আর নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে আছে আরেকজন পুরুষ। তার সামনে রয়েছে পাথর। যখন নদীর লোকটি কিনারে উঠতে চায় তখন কিনারে থাকা লোকটি তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করে। পাথরের আঘাতে লোকটি যেখানে ছিল সেখানে ফিরে যায়। এরপর সে আবারও নদীর কিনারে উঠতে চায়, এভাবে সে যখনই কিনারে উঠতে চায় তখনই তাকে পাথর মেরে যেখানে ছিল সেখানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

আমি আমার সাথে থাকা লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, রক্তের নদীতে অবস্থিত লোকটি, যার মুখের উপর পাথর মেরে আপন জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সে লোকটি কে? তখন তাদের একজন আমাকে বললেন, এ লোকটি সুদখোর।’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৮৬, ২০৮৫

তিন. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে- যে ব্যক্তি সুদ খায় এবং যে সুদ খাওয়ায় উভয়কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৬; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৫১০৪

চার. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে ৭টি গুনাহকে বড় গুনাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হল সুদ খাওয়া। -মুসনাদে বাযযার; আল মু‘জামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ১০২; আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৫৭০৯

পাঁচ. অপর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, যে সাক্ষী থাকে এবং যে ব্যক্তি সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয় সকলের প্রতি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৬০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩৩৩; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৬

এ ছাড়াও আরও অসংখ্য হাদীসে সুদ খাওয়া, সুদ দেওয়া এবং সুদের সাথে কোনোরূপ সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।

এই ভয়াবহতম হারাম কর্মটিকেই এখন বানিয়ে ফেলা হয়েছে অতি উপাদেয় একটি বিষয়। মতলববাজ লোকেরা সকল শ্রেণির মুসলমানদের এতে জড়ানোর জঘন্যতম কাজটি করে যাচ্ছে বিনা বাধায়।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাকওয়া ও হেদায়েতের পথে চলার তাওফীক দান করুন।

Leave a Comment